সাক্ষাৎকার, যার মাধ্যমে নিয়োগকর্তা আপনার ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ, আপনার জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জানতে পারেন, আপনি আর আপনার দক্ষতা তখন আর কোনও কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে না। নিয়োগকর্তার সামনে নিজেকে দক্ষভাবে তুলে ধরার একটি অনন্য সুযোগ হয়ে আসে সাক্ষাৎকার। মূলত এটিই আপনার অন্যতম একটি সুযোগ নিজেকে নিয়োগকর্তার সামনে সরাসরি উপস্থাপন করার যার মাধ্যমে আপনি নিদিষ্ট উদাহরণের সাহায্যে নিয়োগকর্তাকে বোঝানোর সুযোগ পান কেন আপনি সংশ্লিষ্ট পদের জন্য যোগ্য। অন্যদিকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আপনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যাচাই করার সুযোগ পান নিয়োগকর্তা। তাই সাক্ষাতকারে নিজেকে সঠিক ভাবে নিজের মত করে উপস্থাপন করতে না পারলে আপনার মেধা থাকা সত্ত্বেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবার সম্ভাবনা থাকে। আর নিজেকে সঠিক ভাবে এবং সফলভাবে উপস্থাপন করার জন্য একটি ভালো প্রস্তুতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই আসুন জেনে নেই কিভাবে নিবেন একটি সফল সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি।
একটি ভালো প্রস্তুতি তখনি সম্ভব যখন আপনি জানবেন কেন প্রস্তুতি নিচ্ছেন , কিসের জন্য নিচ্ছেন এবং যার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করচ্ছেন তার উদ্দেশ কি? কেন তিনি আপনার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।এই বিষয়গুলো যদি আপনার জানা থাকে তাহলে সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়াও যেমন সহজ হয় ঠিক তেমনি নিজেকে সাবলীল ও দক্ষভাবে উপস্থাপন করাও সহজ হয়।তাহলে আসুন জেনে নেই নিয়োগকর্তা কেন সাক্ষাতকার নেন।চাকরি প্রার্থীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে চাকরিদাতা জানতে চান প্রার্থী
সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার জুড়ে এই প্রশ্নেরই উত্তর নিয়োগকর্তারা খুঁজে থাকেন, তাই আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার বর্ণনার মাধ্যমে তাদের কে বুঝাতে হবে কেন আপনি নিজেকে পদটির জন্য উপযুক্ত মনে করেন।
ভয়কে জয় করুন। আপনার মনের ভেতরের অহেতুক ভয়টিকে যদি জয় করতে না পারেন তাহলে সে কখনোই আপনাকে জয়ী হতে দেবে না। শত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দেখবেন আপনি হেরে যাচ্ছেন। কারণ ভয় আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছে। আপনাকে আটকে ধরে রাখছে অহেতুক দুশ্চিন্তার বেড়াজালে। তাই ভয় নয়,ভয়কে জয় করুন। নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন।নিজেকে বলুন আপনি পারবেন।খারাপ হলে আপনি চাকরিটা পাবেন না,এর বেশি কিছু নয়। অহেতুক ভয়কে দূর করার জন্য নিজেকে তিনটি কথা বলুন
এছাড়াও সাক্ষাতকারের দিন ভয় কাটানোর জন্য ১০ মিনিট পূর্বে সাক্ষাতকারের স্থানে উপস্থিত হন, গলা শুকিয়ে আসলে পিওনের কাছ থেকে পানি খেয়ে নিতে পারেন সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বেই, কোনোভাবেই নিয়োগকর্তাদের কাছে পানি খেতে যাবেন না, স্নায়বিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য বার বার দীর্ঘ নিশ্বাস নিন, এতে আপনি ভয় কাটিয়ে অনেক স্বাভাবিক ও সাবলীল হয়ে সাক্ষাৎকারে প্রবেশ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, ভয় পেয়েছেন তো হেরেছেন, তাই ভয়কে জয় করুন সাফল্য আপনারই।
অনুশীলন,অনুশীলন আর অনুশীলন, একটি ভালো সাক্ষাৎকারের জন্য অনুশীলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, তাই অনুশীলন করুন, সাক্ষাৎকারে যাবার পূর্বে যতটুকু অনুশীলন করা সম্ভব, নিজেকে যত ভালো করে তৈরি করবেন সাক্ষাৎকারে ততই সফলতার দিকে এগিয়ে যাবেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করুন কিভাবে আপনি কথা বলবেন, আপনার অভিব্যক্তি গুলো ভালো করে লক্ষ্য করুন, দেখুন আপনি নিজেকে সন্তুষ্ট করতে পারচ্ছেন কিনা, আপনার চোখে যদি কোনো ভুল ধরা পরে তা ঠিক করার চেষ্টা করুন।তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও ছায়া সাক্ষাৎকার দিন, এই অনুশীলনটি আপনার ভেতরকার জড়তাগুলোকে ভেঙ্গে দিবে ফলে মূল সাক্ষাৎকারের সময় আপনি আরো সাবলীল ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন।আপনার অনুশীলনটিকে আরো একটু মাত্রা দিতে আপনার বন্ধুদের সাহায্য নিতে পারেন,তাদের সাহায্যে একটি ছায়া সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করুন, জিজ্ঞাসা করুন আপনার অভিব্যক্তি,চোখের দৃষ্টির মাঝে কোনো স্নায়বিক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে কিনা, কেননা আপনার কথা দিয়ে আপনি আত্মবিশ্বাসের ছাপ ফুটিয়ে তুলতে পারলেও তা যদি আপনার অভিব্যক্তিতে প্রকাশ না পায় তাহলে তা নিয়োগকর্তাদের মাঝে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে না। প্রস্তুতিতে আরো একটু মাত্রা যোগ করতে আপনার অভিব্যক্তি গুলোকে ভিডিও করতে পারেন, আপনি নিজেও দেখে নিন কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে, অন্যদের জিজ্ঞাসা করুন, তাদের মতামত নিন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করুন।মনে রাখবেন একটি ভালো প্রস্তুতিই একটি ভালো সাক্ষাৎকারের পথ সুগম করে দেয়।
কখনোই ভাবতে যাবেন না একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পেয়ে যাবেন, ভাবতে হবে এটা সূচনা মাত্র, সাক্ষাৎকার যেমনি হোক না কেন ভাবুন আপনি দুই ভাবেই সফল হবেন, হয় চাকরিটি পাবেন না হয় নতুন কিছু শিখবেন যা কাজে লাগিয়ে আপনি পরবর্তী সাক্ষাৎকারে ভালো করবেন। রে দেয়।
একটি সফল সাক্ষাৎকারের জন্য প্রয়োজন একটি ভালো প্রস্তুতি, তাহলে আসুন জেনে নেই কিভাবে নিবেন একটি ভালো প্রস্তুতি;
সাক্ষাতকারে যাবার আগে নিজেকে আয়নার সামনে আরো একবার দেখে নিন, দেখুন আপনার পোশাক ঠিক আছে কিনা,তাতে পেশাধারি মনোভাব ফুটে উঠেছে কিনা দেখে নিন আর আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে বলুন আমি পারব এবং দেখুন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়েছেন কিনা, যে সকল বিষয়গুলো অবশ্যই সংগে রাখতে হবে তা হল
সাক্ষাৎকার সব সময় অনিশ্চিত , আপনি বলতে পারবেন না আপনিই পারবেন , আপনিই জিতে আসবেন , অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আপনার শত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও এমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন যার উত্তর আপনাকে অনেক দুর্বল করে দিয়েছে, লক্ষ্য করবেন কোনো এক অজানা কারণে আপনার ভারী আত্মবিশ্বাসী গলা কেঁপে কেঁপে উঠেছে-প্রশ্ন বানের আঘাতে, অনেক সময় নিয়োগকর্তারা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে শুরু করেন, যা আপনাকে স্নায়ুবিক ভাবে দুর্বল করে তুলতে পারে , কিন্তু মাথায় রাখবেন এই সকল অনিশ্চিত মুহূর্তগুলোর আবির্ভাবের অন্যতম কারণই হচ্ছে আপনাকে বাজিয়ে দেখা, আপনি কর্ম ক্ষেত্রে অনিশ্চিত মুহূর্তগুলোতে নিজেকে কিভাবে স্থির রাখবেন তা দেখা, তাই সাহস রাখুন, বিজয় আপনারই।
মনে রাখবেন, সাক্ষাৎকারে আসার অন্যতম কারণ যেমন আপনার একটি ভালো চাকরি পাওয়া ঠিক তেমনি সাক্ষাৎকারটি আয়োজনের ও মূল কারণ হচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন যোগ্য কর্মী খুঁজে বের করা,তাই সব সময় মনে রাখবেন, নিয়োগ কর্তারা যাই করুক না কেন তার পিছনের উদ্দেশ্য আপনাকে বাজিয়ে দেখা আপনাকে বাদ দেয়া নয় , তাই তারা প্রতি ক্ষেত্রে আপনার কাছে প্রমাণ চাইবে, আপনাকে জানার, আপনাকে বোঝার । আর তার জন্যই প্রতি মুহূর্তেই আপনাকে প্রমাণ করে যেতে হবে, নিজেকে প্রমাণ করার মানসিকতায় লেগে থাকতে হবে সাক্ষাৎকারের শেষ অবধি।
মনে রাখবেন আপনাকে যাচাই করাই হলো নিয়োগকর্তাদের অন্যতম কাজ, তাই এই যাচাইটা আরো একটু বাজিয়ে দেখতে তারা হয়তো আপনার সাথে অনেক রুক্ষ হতে পারে, হয়তো আপনাকে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিয়েই আরো একটি প্রশ্নের অবতারণা করতে পারে, যার উদ্দেশ্য হলো আপনি চাপের মুখে কাজ করতে পারবেন কিনা তা দেখা। তাই লক্ষ্য হারাবেন না, সাহস তো নয়ই, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে প্রশ্নের উত্তর দিন, তাহলেই জয় আপনার।
বার বার অনুশীলন যে কোন কাজকে নিখুঁত করে তুলে। একটি ভালো চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য চাই একটি ভালো অনুশীলন। যার ফলে আপনার ভুলত্রুটি আপনি আগে থেকেই ধরতে পারেন এবং নিজে থেকেই শুধরে নেয়ার সুযোগ পাবেন।বিশেষজ্ঞদের মতে একটি ভালো অনুশীলন অভাবনীয় ফলাফল নিয়ে আসতে পারে।আবার অনেক সময় প্রার্থীর ভয় ও স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে প্রার্থী ভুল করে বসেন , নিজেকে ঠিক মতো তুলে ধরতে পারেন না একটি ভালো অনুশীলনের মাধ্যমে এই সকল জড়তা ও দুর্বলতাকে সহজেই কাটিয়ে উঠা যায়।আসুন জেনে নেই কিভাবে অনুশীলন করবেন চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য।
আপনার দুর্বল দিকগুলো বের করুন।ভাবুন সাক্ষাৎকারের কোন কোন বিষয় আপনাকে ঘাবড়ে দেয়। কোন কোন বিষয়ের উপর আপনি কাজ করতে চান। যদি সাক্ষাৎকারের পরিবেশ আপনাকে ঘাবড়ে দেয় , কিংবা আপনি প্রশ্নের উত্তর বলার সময় উত্তরগুলোকে অগোছালো করে ফেলেন, তাহলে এই বিষয়গুলো উপর আপনি কাজ করতে পারেন। এই রকম ভাবে বের করুন কি কি বিষয়ের উপর আপনি কাজ করতে চান। এর জন্য আপনার দুর্বল দিকগুলোর একটি লিস্ট তৈরি করতে পারেন এবং সেই সকল দূর্বলতা কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেন সে বিষয়ে চেষ্টা করুন ।
আপনি ঠিক করে ফেলেছেন কি কি বিষয়ের উপর অনুশীলন করবেন। এখন সাক্ষাৎকারে জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করুন । এই পরিবেশের মধ্যে থাকতে পারে একটি চেয়ার , একটি টেবিল এবং আপনার দুজন সহকারী যারা চাকরিদাতার অভিনয় করবে। যদি কোনো সহকারী পাওয়া না যায় অথবা চেয়ার টেবিলের মতো করে ছায়া সাক্ষাৎকারে ব্যবস্থা করা না যায় , তাহলে আয়নাকে বেছে নিতে পারেন আপনার সহকারী হিসেবে। সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করতে পারলে ভালো, ফলে আপনি পরবর্তীতে আপনার ভুলত্রুটি দেখতে পারবেন এবং শুধরে নিতে পারবেন।
ছায়া সাক্ষাৎকারের আবহ তৈরি হয়ে গেছে।এখন সাক্ষাৎকার দিন।কখনোই ভাবতে যাবেন না এটি মিথ্যে সাক্ষাৎকার। ভাবুন আপনি সত্যি একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। একদম শুরু থেকে শেষ অবধি সাক্ষাৎকার দিন। ভুল হলে আবার শুরু করুন।যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সন্তুষ্ট হতে পারছেন ততোক্ষণ পর্যন্ত দিয়ে যান।যদি আয়নার সামনে হয় তাহলে নিজেকে ভালো করে লক্ষ্য করুন। সাক্ষাৎকার শেষে নিজের ভুলত্রুটি গুলো লিখে রাখুন এবং শুধরে আবার সাক্ষাৎকার দিন ততোক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি নিজেকে সন্তুষ্ট করতে পারছেন।
ছায়া সাক্ষাৎকার শেষে আপনার সাহায্যকারীর মন্তব্য গ্রহণ করুন। জেনে নিন আপনার কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে। ভুলগুলোকে সহজ ভাবে গ্রহণ করুন। এবং তা শুধরে আবার সাক্ষাৎকার দিন। এই ভাবে বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে শুধরে নিন।
খেয়াল রাখতে হবে আপনার আচরণটি যাতে কোনো ভাবেই রোবটের মতো হয়ে না যায়। যাতে বার বার অনুশীলনের ফলে উত্তরগুলো মুখস্থ হয়ে না যায়। যেন মনে না হয় আপনি মুখস্থ করে এসেছেন কিংবা উত্তর দিতে আপনার কোনো প্রকার কষ্ট হচ্ছে।খেয়াল রাখতে হবে যে উত্তরগুলো যেন সহজ ও সাবলীল শোনায়। সহজ ও সাবলীলভাবে নির্দ্বিধায় উত্তর দেয়ার অনুশীলন করতে হবে।
একটি ভালো প্রস্তুতি একটি ভালো সাক্ষাৎকারের পথ সুগম করে দেয়। আর ভালো প্রস্তুতির জন্য চাই বেশি বেশি অনুশীলন। যা ক্রমান্বয়ে আপনার ভয় , জড়তাকে দূর করে আত্মবিশ্বাসী করে নিজেকে উপস্থাপন করতে সহায়তা করবে। সর্বোপরি একজন সফল প্রার্থী হিসেবে নিয়োগকর্তাদের সামনে তুলে ধরবে।
ভয় আমাদের সব থেকে বড় শত্রু। আপনার ভেতরে অপরিসীম মেধা আর যোগ্যতা থাকা সত্তেও অহেতুক ভয় আপনার মেধার বিকাশ হতে দেয় না।এক অদৃশ্য শিকলে যেন বাধা পড়ে আপনার হাত , পা চোখ ,মুখ সব কিছু। আর এই ভয়ের অদৃশ্য শিকলের কারণেই আপনি বুঝতে পারেন উত্তর জানা থাকা সত্ত্বেও সঠিক উত্তরটি আপনার দেয়া হয়ে উঠে নি। আপনার প্রকম্পিত গলা আপনার স্বর কে নিচু করে দিয়েছে , আপনার হাত পা কে শক্ত কাঠের মতো করে দিয়েছে ফলে উত্তর জানা থাকা সত্ত্বেও আপনি পারেননি , পেরে উঠেন নি। তাই চাকরির ইন্টারভিউতে সাফল্য লাভের জন্য , আপনার স্বপ্নের চাকরিটি হাতের মুঠোয় পাবার জন্য ,সর্বপ্রথম কাজই হলো ভয়কে দূর করা। তাহলে আসুন জেনে নেই কিভাবে মন থেকে ভয় দূর করবেন ।
পরাজয়ের চিন্তা নয় , করুন ইতিবাচক চিন্তা। আপনি পারবেন।আপনাকে দিয়েই সম্ভব। যারা পারে তারা আপনারই মত। না পারলে কি হবে , আপনার খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে কিনা-তা ভাবতে যাবেন না। নিজেকে বলুন "একবার না পারিলে দেখো শতবার , বলুন হয় আমি জিতবো না হয় আমি শিখবো"। পরাজয় বলে কিছুই নেই।জয়ী আপনি হবেনই যদি লেগে থাকেন , যদি আপনার মাঝে একাগ্রতা থাকে আর অধ্যাবসায় থাকে। তাই নেতিবাচক চিন্তা করে নিজেকে দমিয়ে দিবেন না , ভাবুন আমি পারবো , আমার দ্বারা হবে। নিজেকে বলুন আমি আমার শত ভাগ দিয়ে আসবো তারপর ও যদি পরাজয় আসে তাহলে আমি মেনে নিব এবং আমার ভুলগুলো শুধরে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ব।এইভাবে ইতিবাচক চিন্তা করুন, আপনার ভেতরের ভয় বাসা বাধতে পারবে না ।
ভয়ের কারণে অনেক সময় আমরা শারীরিক ভাবেও দুর্বল হয়ে উঠি। শরীর শক্ত হয়ে উঠে এবং মন চঞ্চল হয়ে পড়ে। ফলে নিজেকে শান্ত রাখা একদমই সম্ভব হয়ে উঠে না। এই রকম পরিস্থিতিতে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিন। দেখবেন আপনার শরীর- মন শান্ত হয়ে এসেছে। মনের ভেতর থেকেই একটা শক্তি পাচ্ছেন যা আপনার মনের ভেতরের অহেতুক ভয়কে দূর করে দিয়েছে।
একটি ভালো প্রস্তুতি আপনার ভয়কে অনেকাংশেই দূর করে দিতে পারে। সাক্ষাৎকারে কি বলবেন , কিভাবে বলবেন তার একটি প্রস্তুতি নিন , বার বার তা অনুশীলন করুন , দেখবেন সাক্ষাৎকারের সময় ভয়টা অনেকাংশেই কমে এসেছে। অনুশীলনের ফলে আরো দেখবেন আপনি খুব সাবলীলভাবে কথা বলতে পারছেন কোনো দ্বিধা বা সংকোচ ছাড়াই। সাক্ষাৎকারের সম্ভাব্য প্রশ্নগুলো নিয়ে এই অনুশীলন করুন। যেমন আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলে কি বলবেন , আপনার দুর্বলতার কথা জানতে চাইলে কি বলবেন ইত্যাদি প্রশ্নের একটি তালিকা করে নিজে নিজে অনুশীলন করুন। দেখবেন সাক্ষাৎকারের দিন খুবই সাবলীল ভাবেই বলতে পারছেন কোনো সংকোচ আর ভয় ছাড়াই।
যদি কোনো ভাবেই ভয়কে ঠেকাতে না পারেন তাহলে আপনার মাথায় আশা অহেতুক ভয়গুলোকে লিখে ফেলুন। কি হবে , না হবে সব কিছু।এর পর যা লিখেছেন তা দেখুন।দেখবেন ভয়টা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাচ্ছে , দেখবেন আপনার মস্তিষ্ক তখন নিজেই বলে উঠছে- অহেতুক ভয়।এর পর যে কাগজটিতে লিখেছেন সেই কাগজটি ছুড়ে ফেলে দিন।আর ভাবুন , আপনার ভেতরের জমে থাকা ভয়গুলো কাগজটার সাথে সাথে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন।
কিছু ভুল কাজ আমাদের মনকে অহেতুক উত্তেজিত করে তুলে।এই সকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে তার জন্য যা করণীয় তা হচ্ছে
ভয় আমাদের চির শত্রু , এই ভয়কে জয় করতে না পারলে তা কখনই আমাদের জয়ী হতে দিবে না। হতাশা আর ব্যর্থতার বেড়াজালে আটকে রাখবে চিরকাল।সর্বপরি আপনার ইতিবাচক বিশ্বাস আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে আপনার অহেতুক ভয়কে হারিয়ে। তাই বিশ্বাস করুন আপনি পারবেন, তাহলেই আপনি পারবেন সকল ভয়কে ছাপিয়ে জয়ী হতে।
রনি ,সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন স্বনাম ধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে নিয়োগকর্তা হাসি মুখে প্রশ্ন করলেন " আমাদের সাথে কেন কাজ করতে চান ? " প্রশ্ন শুনে একটু ঘাবড়ে গেলেন রনি , কি বলবেন ভেবে পেলেন না।
আমাদের সাথে কেন কাজ করতে চান ? এই ধরনের প্রশ্ন চাকরিদাতারা প্রায়শই করে থাকেন। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া একটু কঠিন। ঠিক বোঝা যায় না কি বললে উত্তরটি সঠিক হবে ও গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তাই জেনে নেওয়া ভালো কিভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন ।
কর্মী নিয়োগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিনিয়োগ। নিয়োগপ্রাপ্ত একজন প্রার্থী পিছনে প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় করতে হয়।কোনো প্রতিষ্ঠানই চাইবে না এই ব্যয়ের অপচয় করতে।তাই তারা নিয়োগের সময় এমন একজন কে নিয়োগ করতে চান যার মাঝে প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তাই নিছক সাধারণ একটি প্রশ্ন মনে হলেও প্রশ্নটি মোটেও সাধারণ নয়। এই প্রশ্নটির মাধ্যমে চাকরিদাতা যে বিষয় জানতে চান তা হলো
১. আপনি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালো মতো গবেষণা করেছেন কিনা।
২. আপনি কেবল টাকার জন্য চাকরিটি করতে চাইছেন নাকি চাকরিটির সাথে আপনার দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার তৈরী করার লক্ষ্য জড়িত আছে।
৩. প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে আপনি কতটুকু মানানসই বা খাপি খাইয়ে চলতে পারবেন কি না।
৪. সর্বোপরি, আপনার এই প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা আছে কিনা
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য দুটি মূল বিষয়কে তুলে আনতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রতি আপনার কাজ করার ইচ্ছা এবং যে কাজটির জন্য আবেদন করেছেন সেই কাজের প্রতি আপনার কতটুকু আগ্রহ আছে।এই দুটি বিষয় তুলে আনার জন্য যা প্রয়োজন তা হলো
প্রতিষ্ঠানটির উপর গবেষণা করুন।প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার লক্ষ্য কিভাবে মিলে যায় তা ব্যখ্যা করার জন্য কোম্পানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা নিন। দেখুন কোম্পানি কি করছে , কিভাবে করছে , মার্কেটে তাদের অবস্থান কেমন , কোন ধরণের কাজ তারা বেশি করছে ইত্যাদি।গবেষণাকে আরো ফলপ্রসূ করতে কোম্পানিতে কাজ করে এমন কাউকে খুঁজে বের করতে পারেন , তাদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি জেনে নিন।জেনে নিন কর্মীদের প্রতি তাদের আচরণ , নমনীয়তা ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানের নতুন কোন পণ্য নিয়ে কাজ করে থাকলে সেই পণ্যের মার্কেটের অবস্থা, সম্ভাবনা, কেন পণ্যটি ভালো বা খারাপ তা নিয়ে গবেষণা করুন।এর জন্য কোম্পানির প্রেস রিলিজ দেখতে পারেন। প্রেস রিলিজ এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন আপডেট যা আপনার গবেষণাকে আরো তথ্য বহুল করবে।প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি জানার জন্য প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ (Facebook Page) দেখতে পারেন তা থেকে ভালো ধারণা পেতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠানে কারা কাজ করছে তাদের সম্পর্কেও জেনে নিতে পারেন লিঙ্কডইন (Linkedin) এর মাধ্যমে। এই সকল গবেষণার ফলে প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা তৈরি হয়ে যাবে তার পাশাপাশি আপনার মাঝেও আগ্রহ তৈরি হবে কেন আপনি প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করতে চান। যেমন হতে পারে আপনি জেনেছেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি অনেক বন্ধু ভাবাপূর্ণ এবং তারা তাদের কর্মীদের ট্রেনিং এর মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে থাকে।এই বিষয়গুলো যদি আপনাকে আগ্রহী করে থাকে তা কিন্তু খুব ভালো একটি পয়েন্ট হতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরটি দেয়ার জন্য।
আপনি যদি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গবেষণা করে থাকেন তাহলে এখন সময় দ্বিতীয় ধাপের। এই ধাপে বের করুন আপনি কি করতে ভালোবাসেন। কি আপনাকে বেশি অনুপ্রাণিত করে এবং কোন বিষয়ে আপনি সব থেকে বেশি দক্ষ। কারণ একজন ভালো কর্মী সেই যে তার কাজকে ভালোবাসে। আর কাজকে আপনি তখনি ভালবাসতে পারবেন যখন তা আপনার লক্ষ্যের সাথে মিলে যায়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে পাওয়া যে বিষয়গুলো আপনাকে আকৃষ্ট করে তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন হতে পারে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করা, সুন্দর কর্ম পরিবেশ, কাস্টমদের বেশি গুরুত্ব দেয়া ইত্যাদি। এর পর এই বিষয়গুলোকে সাজিয়ে আপনার উত্তরটি তৈরি করুন।যেমন আপনি যদি দেখেন প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমার সাপোর্টকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে তাহলে বলুন আপনি কিভাবে প্রতিষ্ঠানের এই জায়গাটিতে নিজেকে সংযুক্ত করতে চান এবং কিভাবে তা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
আপনি এখন জানেন প্রতিষ্ঠানটি কোথায় পৌঁছাতে চায় , কিভাবে তা চায় এবং তার জন্য প্রতিষ্ঠানটি কি করছে। শুধু তাই নয় আপনি জেনে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি, তাদের মূল্যবোধ কিভাবে আপনার লক্ষ্যের সাথে মিলে যায়।আপনি জেনেছেন কোন কোন বিষয়গুলো আপনার লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে। এখন সবগুলো বিষয় এক সাথে করুন। এর পর আপনার উত্তরটি ঠিক করুন যাতে এই বিষয়গুলোর সন্নিবেশ থাকবে এবং তা উপস্থান করুন নিয়গকর্তাদের সামনে।
চাকরির সাক্ষাৎকারে যে প্রশ্নের সম্মুখীন প্রায়শই হতে হয় তাই হল নিজের সম্পর্কে বলা। সাধারণত সাক্ষাৎকারের শুরুতেই নিয়োগকর্তা এই ধরণের প্রশ্নটি করে থাকেন। বলা হয় এই একটি প্রশ্ন ঠিক করে দেয় চাকরিদাতা আপনাকে নিবেন কি নিবেন না। আবার এটিই অন্যতম সুযোগ নিজেকে দক্ষ হিসেবে নিয়োগকর্তার কাছে তুলে ধরা। কিন্তু কিভাবে এবং কেমন করে জানাবেন আপনার সম্পর্কে , কিভাবে বলবেন আপনার কথা। আসুন জেনে নেই।
প্রশ্নটির উত্তর জানার আগে জেনে নেয়া উচিত চাকরিদাতারা এই প্রশ্নটি কেন করে থাকেন। তাহলে উত্তরটি তৈরি করতে সহজ হয়। নিয়োগকর্তা এই প্রশ্নটি করে থাকেন কারন:
১. তিনি আপনাকে জানতে চান , অর্থাৎ আপনি প্রার্থী হিসেবে কতটা যোগ্য তা বুঝতে চান।
২. আপনি নিজেকে কত ভালো করে উপস্থাপন করতে পারেন তা দেখতে চান।
৩. সর্বোপরি আপনার ভেতরের জড়তাকে ভেঙে আপনাকে সহজ ও সাবলীল করে তুলতে চান যাতে পরবর্তী প্রশ্নগুলোতে আপনি সহজ ও সাবলীল ভাবে উত্তর দিতে পারেন।
আপনার সম্পর্কে বলুন। কেবল আপনার সম্পর্কে। কোনো ভাবেই অপ্রাসঙ্গিক কিছু বলা যাবে না। মনে করুন আপনি একটি দোকানে মোবাইল কিনতে গেছেন, আপনার চোখে একটি সুন্দর মোবাইল পড়লো, তো যথারীতি আপনি সেলস ম্যানকে জিজ্ঞাসা করলেন মোবাইলের ফিচার সম্পর্কে বলতে।ভাবুন ঠিক এই সময় যদি সেলস ম্যান মোবাইলটি কিভাবে বানানো হয়েছে তা বলে আপনি কি আর শুনতে আগ্রহী হবেন নাকি মোবাইলের ফিচার সম্পর্কে বললে, যা আপনার কাজে আসবে তা শুনতে আপনি বেশি আগ্রহী হবেন? আপনার সম্পর্কে বলাটাও ঠিক এমন। এমন কিছু বলুন যা চাকরিদাতাদের আপনার সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলে। এমন কিছু নয় যা অপ্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ এমন কিছু যা অন্য প্রার্থীদের থেকে আপনাকে আলাদা করে। আপনাকে সব থেকে সেরা প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করে। তাই এই ক্ষেত্রে যা বলতে পারেন তা হলো:
১. নিজেকে দিয়ে শুরু করুন , আপনার স্কুল , পড়ালেখা , কোন বিষয়ের উপর পড়ালেখা করেছেন তা বলুন।
২. কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য থেকে থাকলে তা উল্লেখ করুন - যেমন স্কলারশিপ, প্রথম স্থান অধিকার করা ইত্যাদি।
৩. তবে আপনার যদি কাজের অভিজ্ঞতা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলুন, আপনার সাফল্য , প্রাপ্তি , দক্ষতা ইত্যাদি বক্তব্যের মাঝে তুলে ধরুন।
৪. যে দুটি গুণ সম্পর্কে বলেছেন তার প্রমাণ দিন , কেন মনে করেন এইগুলো আপনার ভালো গুণ।
৫. একটি দুর্বলতার কথা বলুন, এবং সাথে সাথে বলুন কিভাবে দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন।
৬. ২ থেকে ৩ মিনিটে পুরো বক্তব্যটি শেষ করুন।
এই ধরনের প্রশ্নের জবাবে, কিছু জিনিস যা কখনোই বলা ঠিক নয়, এই বিষয়গুলো হলো:
১. আপনার পারিবারিক বিষয়গুলো তুলে আনা , যেমন আপনার বাবা কি করেন , মা কি করেন , পরিবারে কয়জন ইত্যাদি।
২. যে পদের জন্য সাক্ষাতকার দিচ্ছেন তার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বা কোনো ভাবেই সংশ্লিষ্ট পদে কাজে আসবে না এই রকম কোনো গুণের কথা বলা।
নিজের সম্পর্কে আমরা সবাই জানি।কিন্তু সঠিকভাবে নিজেকে তুলে ধরতে না পারলে তা কখনোই ভালো ফল এনে দিতে পারে না। অন্যদিকে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন শত শত প্রার্থী থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে সহায়তা করে। যা একজন সফল কর্মীর পরিচায়ক। তাই নিজেকে জানুন আর নিজেকে তুলে ধরুন সফল ভাবে।
সাক্ষাতকারের আগের দিন , চাঞ্চল্যকর একটি মুহূর্ত বলা চলে। মনের মাঝে চলতে থাকে নানান স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন।কিন্তু সাক্ষাতকারের এই আগের দিনটিকে যদি যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে তা নিঃসন্দেহে সাফল্য এনে দিতে পারে। তাই জেনে নিন কিভাবে চাকরির সাক্ষাতকারের আগের দিন প্রস্তুতি নিবেন।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করুন , মনে রাখবেন এই সকল তথ্য আপনার সাক্ষাতকারটিকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে। তাই জানুন,প্রতিষ্ঠানের খুঁটি নাটি সম্পর্কে, তাদের প্রতিযোগী কারা, বাজারে তাদের অবস্থান কেমন , তাদের কর্ম পরিবেশ ইত্যাদি। আপনার সংগৃহীত মূল্যবান তথ্য সাক্ষাৎকারের দিন আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং নিয়োগকর্তারা বুঝবেন আপনি এই পদের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক ফলে তাদের আপনার প্রতি একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।
আপনার নিজের সম্পর্কে কি বলবেন তা আগে থেকে ঠিক করে নিন , খেয়াল রাখবেন তা যাতে ২ থেকে ৩ মিনিটেই বলা যায়, যাতে আপনাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হবে আপনার সম্পর্কে বলুন তা যেন আপনি সহজ ও সাবলীল ভাষায় বলে দিতে পারেন, তবে লক্ষ্য রাখবেন কোনো ভাবেই যাতে তা মুখস্থ না শুনায়।
সম্ভাব্য কিছু প্রশ্নের উত্তর যা প্রায়ই সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে তাদের উত্তর আগে থেকে তৈরি করে নিন। সাক্ষাতকারে আসা এই রকম কিছু পরিচিত প্রশ্ন হলো:
১. আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন?
২. আপনি পূর্বের চাকরিটি কেন ছেড়েছেন / কেন ছাড়তে চাচ্ছেন?
৩. এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনি কি জানেন ?
৪. আপনার সামর্থ্য ও দুর্বলতাগুলো কি কি ?
৫. আপনি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন কাজ করতে চান ?
৬. আপনার সব থেকে বড় অর্জন কি?
৭. আমরা কেন আপনাকেই নির্বাচন করবো ?
৮. আপনি কত টাকা বেতন প্রত্যাশা করছেন?
৯. আপনি যদি বস হতেন তাহলে আপনি এই প্রতিষ্ঠানের কোন বিষয়টি পরিবর্তন করতেন ?
মনে রাখবেন ভালো প্রস্তুতিই পারে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে , আপনার আত্মবিশ্বাসকে সুদৃহ করতে যথারীতি নিজেকে সফলভাবে উপস্থাপন করতে। তাই প্রস্তুতিটি নিন সাক্ষাতকারের আগের দিন থেকেই যথাযথ ভাবে।
অনেক সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন , কিন্তু কোনো ফলাফল পাচ্ছেন না। কোনো একটা কারণে কেন যেন আপনার স্বপ্নের চাকরিটি বার বার হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সব কিছুতেই ভালো করছেন কিন্তু সাক্ষাৎকারে যেয়েই সব গুলিয়ে ফেলছেন। ঠিক বুঝতে পারছেন না কি কারণে এমনটা হচ্ছে। এর মূল কারণটি হচ্ছে আপনি চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য অবশ্যই পালনীয় পূর্ব শর্ত গুলো মেনে চলছেন না।যার ফলে শত চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আপনার সেরাটা দিয়ে আসতে পারছেন না। তাই জেনে নিন চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য অবশ্যই পালনীয় তিনটি পূর্ব শর্ত।
ভয়কে জয় করুন। আপনার মনের ভেতরের অহেতুক ভয়টিকে যদি জয় করতে না পারেন তাহলে সে কখনোই আপনাকে জয়ী হতে দেবে না। শত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দেখবেন আপনি হেরে যাচ্ছেন। কারণ ভয় আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছে। আপনাকে আটকে ধরে রাখছে অহেতুক দুশ্চিন্তার বেড়াজালে। তাই ভয় নয়,ভয়কে জয় করুন। নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন। নিজেকে বলুন আপনি পারবেন।খারাপ হলে আপনি চাকরিটা পাবেন না,এর বেশি কিছু নয়। অহেতুক ভয়কে দূর করার জন্য নিজেকে তিনটি কথা বলুন:
১. আপনি কোন বাঘের খাঁচায় পড়তে যাচ্ছেন না।
২. পৃথিবীর সবাই সবকিছু জানে না , এমন অনেক কিছুই আছে যা আপনি জানবেন কিন্তু চাকরিদাতা জানবেন না।
৩. আপনার হারানোর কিছু নেই, হয় আপনি জিতবেন না হয় আপনি শিখবেন।
এছাড়াও সাক্ষাতকারের দিন ভয় কাটানোর জন্য ১০ মিনিট পূর্বে সাক্ষাতকারের স্থানে উপস্থিত হন, গলা শুকিয়ে আসলে পিওনের কাছ থেকে পানি খেয়ে নিতে পারেন সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বেই, কোনোভাবেই নিয়োগকর্তাদের কাছে পানি খেতে যাবেন না, স্নায়বিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য বার বার দীর্ঘ নিশ্বাস নিন, এতে আপনি ভয় কাটিয়ে অনেক স্বাভাবিক ও সাবলীল হয়ে সাক্ষাৎকারে প্রবেশ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, ভয় পেয়েছেন তো হেরেছেন, তাই ভয়কে জয় করুন সাফল্য আপনারই।
অনুশীলন,অনুশীলন আর অনুশীলন, একটি ভালো সাক্ষাৎকারের জন্য অনুশীলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, তাই অনুশীলন করুন, সাক্ষাৎকারে যাবার পূর্বে যতটুকু অনুশীলন করা সম্ভব, নিজেকে যত ভালো করে তৈরি করবেন সাক্ষাৎকারে ততই সফলতার দিকে এগিয়ে যাবেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করুন কিভাবে আপনি কথা বলবেন, আপনার অভিব্যক্তি গুলো ভালো করে লক্ষ্য করুন, দেখুন আপনি নিজেকে সন্তুষ্ট করতে পারচ্ছেন কিনা, আপনার চোখে যদি কোনো ভুল ধরা পরে তা ঠিক করার চেষ্টা করুন।তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও ছায়া সাক্ষাৎকার দিন, এই অনুশীলনটি আপনার ভেতরকার জড়তাগুলোকে ভেঙ্গে দিবে ফলে মূল সাক্ষাৎকারের সময় আপনি আরো সাবলীল ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন।আপনার অনুশীলনটিকে আরো একটু মাত্রা দিতে আপনার বন্ধুদের সাহায্য নিতে পারেন,তাদের সাহায্যে একটি ছায়া সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করুন, জিজ্ঞাসা করুন আপনার অভিব্যক্তি,চোখের দৃষ্টির মাঝে কোনো স্নায়বিক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে কিনা, কেননা আপনার কথা দিয়ে আপনি আত্মবিশ্বাসের ছাপ ফুটিয়ে তুলতে পারলেও তা যদি আপনার অভিব্যক্তিতে প্রকাশ না পায় তাহলে তা নিয়োগকর্তাদের মাঝে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে না। প্রস্তুতিতে আরো একটু মাত্রা যোগ করতে আপনার অভিব্যক্তি গুলোকে ভিডিও করতে পারেন, আপনি নিজেও দেখে নিন কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে, অন্যদের জিজ্ঞাসা করুন, তাদের মতামত নিন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করুন।মনে রাখবেন একটি ভালো প্রস্তুতিই একটি ভালো সাক্ষাৎকারের পথ সুগম করে দেয়।
কখনোই ভাবতে যাবেন না একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পেয়ে যাবেন, ভাবতে হবে এটা সূচনা মাত্র, সাক্ষাৎকার যেমনি হোক না কেন ভাবুন আপনি দুই ভাবেই সফল হবেন, হয় চাকরিটি পাবেন না হয় নতুন কিছু শিখবেন যা কাজে লাগিয়ে আপনি পরবর্তী সাক্ষাৎকারে ভালো করবেন।
সাক্ষাতকারের একটি পর্যায়ে নিয়োগকর্তা হাসিমুখে জানতে চাইলেন আপনার সব থেকে বড় দুর্বলতা কি ? একটু ঘাবড়ে গেলেন , কি বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। নিজের সম্পর্কে ভালো কিছু বলা যায় নিমিষেই কিন্তু দুর্বলতা ! যেখানটায় নিজেকে প্রমাণ করতে এসেছেন সেখানটায় দুর্বলতার কথা কিভাবে বলবেন।সেই দুর্বলতাটা আবার চাকরি থেকে বাদ পড়ার অন্যতম কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। তাই এই প্রশ্নের উত্তরটি হওয়া চাই নিরপেক্ষ যা চাকরি থেকে বাদ পড়ার অন্যতম কারণ হবে না। আসুন তবে জেনে নেই নিরপেক্ষ ভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কৌশল।
এই প্রশ্নের উত্তরটি সঠিক হয় যদি আপনি বুঝতে পারেন কেন আপনাকে সাক্ষাতকারে এই প্রশ্নটি করা হচ্ছে। চাকরিদাতারা সাধারণত এই ধরণের প্রশ্ন করে থাকেন ৩টি বিষয় জেনে নেয়ার জন্য তা হলো:
১. প্রার্থীর নিজের সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা। কেননা যে নিজেকে ভালো করে জানে সে যথারীতি নিজেকে যে কোনো জায়গায় তুলে ধরতে পারে। নিজেকে মানিয়ে চলতে পারে বৈরী পরিবেশের সাথে।তাই এই প্রশ্নের মাধ্যমে তারা জানতে চান আপনি আপনার সম্পর্কে কতটুকু জানেন।
২. আপনি সৎ কিনা। একজন সৎ কর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পদ স্বরূপ। প্রতিষ্ঠান তার উপর নির্দ্বিধায় ভরসা করতে পারে। যা প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সুফল বয়ে আনতে সহায়ক। তাই এই প্রশ্নের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা দেখতে চান আপনি নিজের প্রতি সৎ কিনা। আপনার দোষ -ত্রুটি আপনি বুঝেন কিনা এবং তা মেনে নেয়ার মানসিকতা আছে কিনা। আর সেটা বোঝা তখনিই সম্ভব যখন আপনি আপনার দুর্বলতার কথা বলতে পারবেন চাকরিদাতাদের সামনে।
৩. নিয়োগকর্তা জানতে চান আপনার মাঝে নিজেকে ক্রমান্বয়ে উন্নয়ন করার মানসিকতা আছে কিনা। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে প্রতিনিয়তই নানান উন্নয়নের প্রয়োজন হয়। আর এই উন্নয়ন তখনিই সম্ভব হয় যখন কাজের মধ্যকার ভুলগুলোকে খুঁজে বের করা যায়। চাকরিদাতা দেখতে চান আপনার মাঝে সেই মানসিকতা কতটুকু। আবার অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের মাঝে কর্মীদের ও নিয়মিত উন্নয়নের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই উন্নয়ন কেবল তাদের মাঝেই সম্ভব যারা তাদের দুর্বলতাগুলোকে সহজে মেনে নিতে পারে এবং তা উন্নয়নে কাজ করতে পারে। এই প্রশ্নের মাধ্যেমে নিয়োগকর্তা জানতে চান আপনি সেই মানসিকতার অধিকারী কিনা। আপনার মাঝে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করার মানসিকতা আছে কিনা।
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় ৩টি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখে উত্তর দিতে হবে। এই ৩টি দিক হল:
চাকরিদাতারা সবসময় একজন সং কর্মী খুঁজে থাকেন। তাই আপনার উত্তরের মাঝে সততার প্রকাশ থাকতে হবে। আপনি যদি বলেন আমার কোনো দুর্বলতা নেই। তাহলে তা কখনোই আপনার সততার প্রমাণ হবে না। কারণ এর মাধ্যমে আপনি বোঝাতে চাইছেন আপনার দুর্বলতা আপনি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন যা কখনোই একজন সফল প্রার্থীর লক্ষণ নয়। অন্য দিকে যদি বলেন আমি মশারি টানতে পারি না তাহলেও তা ইঙ্গিত করবে আপনি শুধু মশারিই টানতে পারেন না এছাড়া আর সব কিছুই আপনার দ্বারা সম্ভব। এই রকম উত্তরটি বাস্তবতা বিবর্জিত একটি উত্তর। কেননা একজন মানুষের পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব নয়। ফলে চাকরিদাতারা ভাববেন আপনি কোনো কিছু লুকচ্ছেন অথবা আপনি নিজের সাথে সৎ নন।ফলে আপনি জানেন না আপনার দুর্বলতা কি।
আপনার উত্তরটি সৎ হওয়া বাঞ্ছনীয় কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আবেদনকৃত পদটির সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। যেমন ধরুন আপনি বিক্রয় কর্মীর পদের জন্য সাক্ষাতকার দিচ্ছেন। এই পদটির জন্য বহিঃমুখী মানসিকতার প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে। সেখানটায় আপনি যদি বলেন আপনি মানুষের সাথে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন অথবা আপনি অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ তাহলে এই দুর্বলতাটি হতে পারে একমাত্র কারণ চাকরি থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার। তাই আপনাকে এমন কোনো দুর্বলতার কথা বলতে হবে যা আবেদনকৃত পদের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।
আপনার বক্তব্যের মাঝে তুলে ধরুন কিভাবে দুর্বলতাকে শূদ্রে নেবার চেষ্টা করছেন , আপনার চলার পথে যাতে তা বাধা সৃষ্টি না করে তার জন্য আপনি কি করছেন। দুর্বলতা সবারই থাকে কিন্তু সেই শ্রেষ্ঠ যে কিনা তা কাটিয়ে উঠতে পারে বা কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় অবিরাম লেগে থাকে , বা তাকে মানিয়ে চলতে পারে. এর মাধ্যমে নিয়োগকর্তাদের মাঝে দুটি জিনিস প্রকাশ পাবে , তা হলো:
১. আপনি আপনাকে ভালো করে চিনেন সুতরাং আপনি আপনার কাজের প্রতি আন্তরিক।
২. আপনি অদম্য এবং লক্ষের প্রতি নিশ্চল , কোনো বাধাতেই আপনি দমে থাকার পাত্র নন।
আপনার দুর্বলতা হতে পারে আপনার যথাযথ শক্তি, যদি তা সঠিকভাবে নিয়োগকর্তাদের মাঝে তুলে ধরা যায়। তাই ঘাবড়ে না যেয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে বলুন আপনার দুর্বলতার কথা , তাহলেই যা হতে পারতো আপনার বিফলতার কারণ তাই হয়ে উঠবে আপনার সফলতার কারণ।
সাক্ষাৎকারের শুরু থেকে শেষ অবধি চাকরিদাতা জানতে চান, কেন আপনাকে নির্বাচন করা হবে । আপনার মধ্যে কি গুণ আছে যা আপনাকে অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করে কিংবা এমন কি আছে যা থেকে প্রতিষ্ঠান লাভবান হতে পারে। তাই যখন একজন চাকরিদাতা জিজ্ঞাসা করেন আপনাকে আমারা কেন নেব ? অর্থাৎ তিনি সত্যিই জানতে চাইছেন কেন আপনাকে নির্বাচন করবেন? তাই বলা হয়ে থাকে এই প্রশ্নটি আপনাকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট, যদি আপনি তার উত্তরটি সঠিক ভাবে দিতে পারেন।তাহলে আসুন জেনে নেই কিভাবে দিবেন এই প্রশ্নের উত্তর।
সাক্ষাতকারের প্রতিটি প্রশ্নের পিছনে একটি উদ্দেশ্য থাকে। এই প্রশ্নটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই প্রশ্নের মাধ্যমে চাকরিদাতা যা জানতে চান তা হলো:
১. আপনি নিজেকে তুলে ধরতে পারেন কি না?
২. আপনি অন্যদের থেকে কতটুকু দক্ষ
৩. আপনাকে যে পদের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে সেই পদটির জন্য আপনি সত্যিই নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন কিনা
৪. আপনার ভেতরের আত্মবিশ্বাস কতটুকু তা দেখতে চান
৫. আপনি যে সত্যিই একজন ভালো প্রার্থী তার একটি যথাযথ প্রমাণ চান
৬. সর্বোপরি আপনি প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম কিনা তা জানতে চান
আপনার উত্তরের মাঝে এমন কিছু ফুটে উঠা চায় যা শুনে একজন চাকরিদাতা মনে করেন আপনিই সেরা। কিন্তু এই সেরা কথাটি সরাসরি না বলে বুঝিয়ে বলতে হবে। বোঝাতে হবে কেন আপনি সেরা। কেন আপনি নিজেকে সেরা মনে করেন। আর কিভাবে প্রতিষ্ঠান আপনার দ্বারা লাভবান হবে। এই সব কিছুই বলে বোঝাতে হবে উত্তরের মাধ্যমে । যাতে উত্তরটির পর চাকরিদাতার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ কারণ থাকে আপনাকে নিয়োগ করার। আর এই বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলার জন্য ৩টি বিষয় উত্তরের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে হবে। এই তিনটি বিষয় হলো:
বলুন কিভাবে নিয়োগকর্তা লাভবান হবেন। কিভাবে আপনি লাভবান হবেন তা নয়।সব নিয়োগকর্তাই জানতে চান আপনাকে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে তারা কিভাবে লাভবান হবে। অতিরিক্ত আর কি দিতে পারবেন যা প্রতিষ্ঠানকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই আপনার উত্তরের মাঝে এই বিষয়টি তুলে ধরুন। এই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আবেদন করা পদের সাথে সামঞ্জস্য স্কিলগুলো তুলে ধরুন। যেমন হতে পারে আপনি ক্রেতাদের সাথে সহজ ও সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। আপনি ক্রেতাদের সমস্যা খুব সহজে সমাধান দিতে পারেন ইত্যাদি।
আপনার বক্তব্যের মাঝে আবেদনকৃত পদের সাথে সামঞ্জস্য রাখুন। ধরুন আপনি যে পদে আবেদন করেছেন সেই পদের জন্য এমন একজনকে চাইছে যার মাইক্রোসফট এক্সেল এর উপর ভালো ধারণা আছে। যার মাঝে চাপের মুখে কাজ করার মানসিকতা আছে এবং যে একজন ভালো টীম প্লেয়ার। আপনার বক্তব্যে এই বিষয়গুলো তুলে ধরুন। বলুন আপনি কিভাবে একজন ভালো টীম প্লেয়ার এবং তা কিভাবে এই পদটিতে সাহায্য করবে। প্রমাণ দিন আপনি কিভাবে চাপের মুখে কাজ করতে পারেন এবং তা প্রতিষ্ঠানের জন্য কিভাবে সুফল বয়ে আনতে পারবে।
আপনার বিশেষ গুণ তুলে ধরুন যা অন্যদের থেকে আলাদা। যা আপনাকে একজন অনন্য প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করে। মনে রাখবেন, কেন আপনাকে নির্বাচন করবে তার কিন্তু একটি যথাযোগ্য উত্তর দেয়া চাই যা সত্যিই অন্যদের মাঝে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।আপনি যদি এমন কিছু বলেন যা অন্যদের মাঝেও আছে তাহলে নিয়োগকর্তা কেন আপনাকে নির্বাচন করবেন। তাই নিজেকে আলাদা করে তুলতে হবে।বলতে হবে কিভাবে আপনি অন্যদের থেকে আলাদা।সর্বোপরি কিভাবে আপনি আপনার কাজে দক্ষ ও সেরা। কেননা সেরা প্রার্থীকেই একজন চাকরিদাতা চাকরি দিবেন।
আগেই বলেছি এই প্রশ্নের উত্তরটি গুরুত্বের অপেক্ষা রাখে না। তাই একটু ভুল আপনার ভালো সাক্ষাৎকারটিকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।তাই উত্তরের মাঝে যে বিষয়গুলো কখনোই আসা উচিত নয় তা হলো:
১. নিজেকে অতি দুর্বলভাবে তুলে ধরা , যেমন আমি একজন ফ্রেশার্স আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই আপনি যদি আমায় চাকরিটি দেন তাহলে আমি আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো চাকরিটি ভালো মতো করার
২. উত্তরের মাঝে সাধারণ বিষয়বস্তু তুলে ধরা যা আলাদা ভাবে কোনো কিছু প্রমাণ করে না। যেমন আমি একজন পরিশ্রমী কিন্তু বললেন না কিভাবে আপনি পরিশ্রমী। অথবা বললেন আমি প্রেজেন্টেশনে ভালো কিন্তু বললেন না কেন ভালো ইত্যাদি।
৩. উত্তরটি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দীর্ঘ করা। আপনার উত্তরটি সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অতিকথন উত্তরকে দুর্বল করে তুলে এবং চাকরিদাতাদের মাঝে বিরক্তির কারণ হতে পারে। মনে রাখবেন চাকরির সাক্ষাৎকারের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ১ থেকে ২ মিনিটের বেশি হওয়া উচিত নয়।
একটি ভালো উত্তর একটি ভালো প্রস্তুতির ফলাফল। তাই এই উত্তরটি তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিন। এই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যা করবেন তা হলো:
১. আপনি যে সকল বিষয়ে ভালো তার একটি তালিকা তৈরি করুন
২. যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেই পদের বিষয়াবলী আরো একবার ভালো করে দেখে নিন। জেনে নিন চাকরিটি করার জন্য কি কি বিষয় চাওয়া হচ্ছে। সেই সকল বিষয়ের একটি তালিকা তৈরি করুন।
৩. এর পর মিলিয়ে দেখুন যা চাইছে তার কি কি আপনার মধ্যে আছে আর কি কি নেই।
৪. আপনি বিষয়গুলোর উপর কতটুকু দক্ষ তা বের করুন। আপনার দক্ষতার প্রমাণ আপনি কিভাবে দিবেন তা ঠিক করুন।
৫. আপনার দক্ষতা অন্যদের থেকে কিভাবে আলাদা তা ঠিক করুন এবং তা কিভাবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক তা ঠিক করুন
৬. ২ মিনিটের একটি বক্তব্য তৈরি করুন যার মাঝে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো থাকবে
৭. অনুশীলন করুন , এমনভাবে করুন যাতে তা খুব সহজ ও সাবলীল হয় , যাতে তা মুখস্থ করে এসেছেন এই রকম না শোনায়।
এইভাবে নিজেকে প্রমাণের মাধ্যমে আপনি চাকরিদাতাকে জানিয়ে দিতে পারেন কেন আপনি দক্ষ , কেন তারা আপনাকে নিয়োগ দিবে। মনে রাখবেন আপনার সাক্ষাৎকারের একটি টার্ম কার্ড হতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরটি। যদি উত্তরটি চাকরিদাতাকে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে আপনার চাকরিটি যেমন নিশ্চিত হয়ে যায় ঠিক তেমনি উত্তরটি মনঃপুত না হলে, তা চাকরি সাক্ষাৎকার থেকে বাদ পরার অন্যতম কারণ হওয়ে দাঁড়ায়। কেননা সবাই চায় তার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরা কর্মীটিকে নির্বাচন করতে , আর এই শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করতে পারে সেই, যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে পারে সুনিপুনভাবে।
প্রথমে দর্শন ধারী তারপর গুণ বিচারী। একটি সাক্ষাৎকারের প্রথম ইম্প্রেশন হলো আপনার প্রথম দর্শন।তা যদি ভালো না হয় তাহলে পরবর্তী সময়টা ভালো না হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।কারণ প্রথম দর্শনে আপনার উপর চাকরিদাতাদের যে ধারণা তৈরি হয়েছে তা সাক্ষাতকারের শেষ অবধি পর্যন্ত থেকে যায়। যা কোনো ভাবেই সুফল বয়ে আনতে পারে না। কেননা সাক্ষাতকারে একজন নিয়োগকর্তা শুধু আপনার জ্ঞানই যাচাই করেন না তার সাথে সাথে দেখে নেন আপনি চাকরিটির জন্য আগ্রহী কিনা। আপনার অসাবধানতা বসত পরে আশা পোশাক নিয়োগকর্তাদের কাছে ভুল তথ্য পাঠিয়ে দেয়।তাই সাক্ষাৎকারের সময় সঠিক পোশাক পরিধান করা অনিবার্য। তাহলে আসুন জেনে নেই কোন ধরণের পোশাক সাক্ষাতকারে পরে যাওয়া উচিত।
১. হালকা রঙের স্যুট , টাই আর চামড়ার জুতা পরে যাবেন
২. ঘড়ি বাদে অন্য কোন গহনা যেমন চেইন , কানের দুল ইত্যাদি পড়বেন না।
৩. আপনার হাতে, গলায় বা অন্য কোনো জায়গায় যদি উল্কা চিহ্ন করা থাকে তা ইন্টার্ভিউ এর আগে মুছে ফেলুন অথবা তা যথা সম্ভব দৃষ্টির আড়ালে রাখুন।
৪. জুতা ভালো করে পলিশ করে নিন।
৫. হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করুন তবে তা খুবই অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে যাতে তা কারো বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়
৬. হাতে ব্রেসলেট গলায় চেন ইত্যাদি পড়বেন না
৭. রঙের ক্ষেত্রে নেভি ব্লু অথবা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পড়ুন
৮. ফুল স্লিভ শার্ট পড়ুন।
৯. গাঢ় রং ও অতিরঞ্জিত টাই পড়বেন না
১০. কালো রঙের মোজা পড়ুন
১. সালওয়ার কামিজ , শাড়ি আর স্যান্ডেল অথবা জুতা পরে যেতে পারেন
২. সামান্য গহনা পড়তে পারেন কিন্তু তা হতে হবে খুবই সামান্য।
৩. জুতা বা স্যান্ডেল ভালো করে পলিশ করে নিন।
৪. অতিরিক্ত মেকআপ করতে যাবেন না। খুবই হালকা মেকআপ করুন যাতে তা অতিরঞ্জিত মনে না হয়।
৫. যদি শাড়িতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তাহলেই কেবল শাড়ি পড়ুন নচেৎ শাড়ি পড়বেন না
৬. আপনার স্কিন টোনের সাথে খাপ খায় এমন নেইল পালিশ ব্যবহার করুন
৭. হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করুন তবে তা খুবই অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে যাতে তা কারো বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়
৮. যদি হিল পড়েন তাহলে লক্ষ্য রাখবেন তাতে যেন আপনি নিজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন
স্বপ্নের চাকরিটি পেতে আমরা কে না চাই। কিন্তু সেই চাকরিটি হাতের মুঠোয় পেতে পার করতে হয় নানান পরীক্ষা। এই ধরণের পরীক্ষার উপর কোনো ধারণা না থাকায় প্রথম দিকটায় থমকে যেতে হয়। অন্যদিকে পঠিত বিষয়ের সাথে খুব একটা সামঞ্জস্য না থাকায় নতুন করে আবার প্রস্তুতি নিতে হয়।য া ক্যারিয়ারের পথ চলাকে শ্লথ করে দেয়। এই পথ চলাকে দ্রুত করার জন্য চাই একটি ভালো পূর্ব প্রস্তুতি। আর এই পূর্ব প্রস্তুতির জন্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন চাকরির পরীক্ষার নানান দিক। যা একটি ভালো প্রস্তুতির সহায়ক। তাহলে আসুন জেনে নেই চাকরির পরীক্ষার নানান দিক।
টেলিফোনের মাধ্যমে সাক্ষাতকার নেয়ার প্রক্রিয়াকে টেলিফোনি সাক্ষাতকার বলে। এটি চাকরির পরীক্ষার সর্ব প্রথম ধাপ।সাধারণত বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরণের পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এই পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর মনোভাব , কথা বলার ভঙ্গি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজটি করে থাকেন। এই পরিক্ষায় টেলিফোনে কল করার মাধ্যমে প্রার্থীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন নিয়োগকর্তা। যেমন - প্রার্থীর সম্পর্কে কিছু বলা , প্রার্থীর পরিচয় , কেন চাকরিটি করতে চায় ইত্যাদি। প্রার্থী সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়ায় এই সাক্ষাৎকারের অন্যতম উদ্দেশ।
টেলিফোনি সাক্ষাতকারের পরবর্তী ধাপ হয়ে থাকে লিখিত পরীক্ষা। আবার কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ব্যাংক, বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সরাসরি লিখত পরীক্ষা নিয়ে থাকেন প্রার্থীকে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর। প্রতিষ্ঠান ভেদে লিখিত পরীক্ষাটি দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। একটি বহুনির্বাচনি পরীক্ষা এবং অন্যটি বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষা। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বহুনির্বাচনি পরীক্ষার বিষয়বস্তু হলো সাধারণ জ্ঞান , সাধারণ গণিত , বাংলা ও ইংরেজি। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান ভেদে বিষয়বস্তুর তারতম্য হয়ে থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠান ইংলিশ, সাধারণ গণিত , সাধারণ জ্ঞানের উপর পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান গণিত, ইংলিশ এর পাশাপাশি ক্রিটিকাল রিজনিং ( Critical Reasoning ) , এনালজি ( Analogy ) ,ওয়ার্ড পাজেলের (Word Puzzle) উপর পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। সাধারণ গণিতে যে বিষয়গুলোর উপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে তা হলো -পাটিগণিত,বীজগণিত ও জ্যমিতি। ইংলিশের ক্ষেত্রে ইংলিশ ব্যকরণ , বাক্যপূর্ণ করা (Sentence Completion), শুদ্ধ বাক্য যাচাই করন (Sentence Correction) , কম্প্রিহেনশন ( Comprehension ) এর উপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। বাংলার ক্ষেত্রে, বাংলা সাহিত্য , বাংলা ব্যাকরণ এর উপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এবং সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাংলাদেশ বিষয়াবলী, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলির উপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
সাধারণত সরকারি চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই ধাপটি দেখা না গেলেও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই এই ধরণের পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এই পরীক্ষায় প্রার্থীদের একটি দলে বিভক্ত করে দেয়া হয়।এরপর তাদের একটি বিষয় দেয়া হয় আলোচনা করার জন্য। এই বিষয়টি যেকোনো বিষয়ের উপর হতে পারে।অথবা প্রার্থীদের মাঝে একটি বাস্তবিক সমস্যা তুলে ধরা হয় এবং তা কিভাবে সমাধান করা যায় তা জানতে চাওয়া হয়। এই ধরণের পরীক্ষায় প্রার্থীর যোগযোগের ক্ষমতা, প্রার্থীর চিন্তা করার ক্ষমতা , প্রার্থী একটি সমস্যাকে কিভাবে দেখে থাকেন এবং কিভাবে তার সমাধান দিয়ে থাকেন তা দেখা হয়। এই ধরণের পরীক্ষায় অনেকেই যে ভুলটি করে থাকেন তা হলো কোনো কথা না বলা। অনেকেই সবাইকে কথা বলতে দেখে ঘাবড়ে যান এবং নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন না।আবার অনেকে এতো বেশি আক্রমনাত্মক ও সিরিয়াস হয়ে পড়েন যে অন্য কাউকে বলার সুযোগ দেননা যা চাকরিদাতাদের কাছে নেতিবাচক মনভাব তৈরি করে। অন্যদিকে কেউ কেউ প্রথমদিকেই নেতৃত্ব নিয়ে থাকেন এবং অন্যদেরকে বলার সুযোগ করে দেন।প্রার্থীর এই ধরণের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রার্থীকে অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে রাখে।
সাধারণত দলগত আলোচনার পর এই পরীক্ষা হয়ে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠান ভেদে এর তারতম্য ঘটতে পারে। এই পরীক্ষায় প্রার্থীদের একটি বাস্তব পটভূমি দেয়া হয় এবং তাতে প্রার্থীদেরকে যে পদে আবেদন করেছে সেই পদের একজন কর্মী হিসেবে অভিনয় করতে হয়। যেমন একজন মানব সম্পদ ব্যাবস্থাপক হিসেবে অভিনয় করা অথবা একজন বিক্রয় কর্মী হিসেবে অভিনয় করা ইত্যাদি। এই ধরণের পরীক্ষায় দেখা হয় প্রার্থী ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানে কতটুকু দক্ষ এবং চাপের মুখে প্রার্থী কিভাবে নিজেকে সামাল দিয়ে থাকেন।
এই পর্যায়ে প্রার্থীকে একটি বিষয় দেয়া হয় এবং একটি সময় বেঁধে দেয়া হয় প্রেজেন্টেশন তৈরী করার জন্য ও তা নিয়োগকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য। এই কাজটি এক অথবা দলগত ভাবে হয়ে থাকে। যদি দলগতভাবে কাজটি দেয়া হয় সেইক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা দেখতে চান প্রার্থী একটি দলের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করছে , দলগত কাজে তার আচরণ এবং সর্বোপরি তার উপস্থাপনার দক্ষতা চাকরিদাতারা যাচাই করে থাকেন।
শুনতে অবাক লাগলেও ব্যপারটি সত্যি। এই পরীক্ষায় প্রার্থীদের বিভিন্ন খেলা খেলতে দেয়া হয়, যেমন গোলক ধাঁধার সমাধান , গুপ্তধন সন্ধান, বাক্স বানানো ইত্যাদি। এই পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হয়ে থাকে প্রার্থীর নেতৃত্ব দানের ক্ষমতাকে যাচাই করা, প্রার্থী দলের সাথে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে কাজ করতে পারে তা দেখা এবং লক্ষ্য অর্জনে কিভাবে কৌশলগতভাবে কাজ করে থাকে তা দেখা।
চাকরি প্রার্থীর সাথে সরাসরি কথা বলার প্রক্রিয়াটি হলো সাক্ষাতকার। সাধারণত সাক্ষাতকার দুটি পর্যায়ে হয়ে থাকে , প্রাথমিক সাক্ষাতকার ও চূড়ান্ত সাক্ষাতকার । সাক্ষাতকারের দুটি ধাপের অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রার্থীকে ভালো করে জানা ও বোঝা। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার পরবর্তী ধাপটিই হয়ে থাকে মৌখিক পরীক্ষা বা সাক্ষাতকার । অন্যদিকে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিখিত পরীক্ষার পর চূড়ান্ত সাক্ষাতকার নিয়ে থাকে আবার কেউ কেউ দুটি ধাপে সাক্ষাতকার গ্রহণ করে থাকেন।
উপরে বর্ণিত পরীক্ষাগুলোর বর্ণনা পড়ে যদি গলা শুকিয়ে আসে তাহলে একটি দীর্ঘ নিঃস্বাস নিন। হ্যাঁ আপনি পারবেন , পরীক্ষার ধাপ যতই বেশি হোক না কেন। প্রস্তুতিটি যত ভালো করে নিবেন ততই ভালো করবেন।আর তার জন্য সবার প্রথমে যে বিষয়টি চাই তা হলো আত্মবিশ্বাস। আপনার দৃহ আত্মবিশ্বাস আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারবে পরীক্ষা যতই কঠিন হোক না কেন। আর এই আত্মবিশ্বাস আপনি তখনিই পাবেন যখন আপনার একটি ভালো প্রস্তুতি থাকবে। তাই এখনই সময় নিজেকে প্রস্তুত করুন আর এগিয়ে যান স্বপ্ন ছোঁয়ার অভিপ্রায়ে।