স্মারকলিপিতে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে প্রাথমিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসবিহীন নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে শূন্য পদ পূরণের অপরিহার্যতা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সচিব আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বর্তমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকসংকট নিরসনে ৫৮ হাজারের মতো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও অবসরের কারণে পদসংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর সরকারি চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ার পথে এবং অনেকের বয়সসীমা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তাই এ পরীক্ষার চূড়ান্ত নিয়োগের মাধ্যমে বয়সসীমা শেষ হওয়ার পথে থাকা প্রার্থীদের সংকটের সমাধান জরুরি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাগুলোতে সাধারণত লিখিত পরীক্ষায় প্রতি তিনজনে একজনকে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হতো। এ ছাড়া চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২৩ সালের মধ্যে দেড় লক্ষাধিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চলমান নিয়োগে পদসংখ্যা বৃদ্ধির দাবি রাখে। এ ছাড়া ২০১৮ সালেও ১২ হাজার পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বাস্তবতার নিরিখে ১৮ হাজারের বেশি প্রার্থীকে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমান নিয়োগ কার্যক্রম দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। এরই মধ্যে অনেকে অন্য চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে হয়তো যোগদান করবেন না। তাই চূড়ান্ত ফলাফলের পর যতসংখ্যক উত্তীর্ণ প্রার্থী চাকরিতে যোগদান করবেন না, সেই শূন্য পদগুলোর জন্য ‘অপেক্ষমাণ তালিকা’ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২০-এ পদসংখ্যা যথাসম্ভব বাড়িয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগদানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
চাকরিপ্রত্যাশী মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলমান নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চসংখ্যক শূন্য পদে নিয়োগের দাবিতে আজ ৫৭ জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। ডিসি স্যার এবং শিক্ষা অফিসাররা আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন। আশা করছি, বেকারদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে পদসংখ্যা বাড়ানো হবে এবং সর্বোচ্চসংখ্যক শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।’
প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সে সময় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। অবসরজনিত আরও ১০ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়ে। এতে বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্য পদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্য পদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে পদসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। পদ বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধনও করেন চাকরিপ্রার্থীরা। সবশেষ গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, শূন্য পদ যাচাই-বাছাই করে ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন শুরু হয়। আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ প্রার্থী। নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা তিন ধাপে নেওয়া হলেও চূড়ান্ত ফলাফল একবারেই প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪০ হাজার ৮৬২ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৫৯৫ এবং তৃতীয় ধাপে ৫৭ হাজার ৩৬৮ জন। এ নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ প্রার্থী।